বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আদিবাসী ছাত্র পরিষদের ৫ম কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় তারা সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ ১২ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। রোববার (১৯ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় ক্যাম্পাসে র্যালি করেন তারা। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ডিনস্ কমপ্লেক্সের সামনে মিলিত হোন। সেখানে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলন চলাকালে ১২ দফা দাবি উত্থাপন করে পরিষদের সহ-সভাপতি সাবিত্রি হেমবর্ম বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমরা শিক্ষাসহ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছি। আমাদের নারীরা বিভিন্ন সময়ে হয়েছে লাঞ্ছিত। আদিবাসী ছাত্র পরিষদ এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় কথা বলেছে। আমাদের অধিকার আদারে আমরা রাজপথে ছিলাম আছি এবং থাকব।
এসময় তিনি ১২ দফা দাবি উত্থাপন করেন। সেগুলো হলো আদিবাসীদের নিজস্ব আত্মপরিচয় আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সমতল আদিবাসীদের জন্য স্বাধীন ও আদিবাসীদের পৃথক ভূমি কমিশন গঠন, আদিবাসী অধিকার আইন প্রণয়ন, আদিবাসী বিষয়ক জাতীয় কমিশন ও মন্ত্রণালয় গঠন, আদিবাসীদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু, দেশের সকল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৫% সংরক্ষিত আসন, আদিবাসীদের সংস্কৃতি, জীবন ও ঐতিহাসিক সংগ্রামসমূহ পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত, আদিবাসী ভাষাসমূহকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভাষা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত, আদিবাসীদের জন্য উচ্চশিক্ষা, প্রথম দ্বিতীয় শ্রেণিসহ সকল সরকারি চাকুরীতে আদিবাসীদের বিশেষ ৫% কোটা সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন, আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা, প্রত্যেক বিভাগীয় ও জেলা শহরে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ, সমতলের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পড়াশুনার সুযোগ, আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, সরকারি গেজেটে বাদপড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নাম অন্তর্ভুক্ত ইত্যাদি।
এ সময় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তরুণ মুণ্ডার সঞ্চালনায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির রাজশাহী জেলা শাখার সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বারজান বলেন, "মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে যদি দেশ পরিচালনা হতো তাহলে আজ আলাদা আলাদা পরিচয়ের দরকার হতো না। কে মুসলিম, কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ এই ভেদাভেদ দূর করার জন্যই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। ১৯৭৫ সালে দেশে যদি এমন ঘটনা না হতো, বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতো তাহলে আমাদের দেশে আজ এরকম অবস্থা হতো না।"
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএস অধ্যাপক ড. সরোচিষ সরকার, মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহাবুবা কানিজ কেয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ সভাপতি জিনিচ চাকমাসহ শতাধিক আদিবাসী শিক্ষার্থী।